রবিউল ইসলাম খাঁ (কুয়েত)
নিজের বিভিন্ন সমস্যার কথা যেমন, অর্থ সংকটে অমানবিক পরিস্থিতি, ছেলেদের লেখাপড়া করানোর খরচ,আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত, রেসিডেন্স ইস্যু ও ব্যাংক এর ট্রানজেকশন সম্পন্নসহ নানান সমস্যার কথা বলে গত প্রায় দেড় বছরে ৪১ হাজার কুয়েতি দিনার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি টাকা) অর্থ ঋণ হিসেবে নেন কুয়েত প্রবাসী শামিম আহমদ।
পরে সেই ঋণ নেওয়া টাকা পরিশোধ না করেই কুয়েত থেকে পালিয়ে যান শামিম আহমদ।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) কুয়েত সিটির রাজধানী হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল মন্নান।
ন্যায় বিচারের দাবিতে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে হাজী আব্দুল মন্নান বলেন, গত দেড় বছরে বহু বার আমার পাওনা টাকা ফেরত চেয়েও আমি একটি টাকাও ফেরত পাইনি। যদিও টাকা ফেরত দেবেন বলে শামিম আহমদ অনেক বার আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
হাজী আব্দুল মান্নান
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রবাসী ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল মন্নান। কীভাবে এত টাকা প্রবাসী শামিম আহমদকে দিলেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মন্নান বলেন, প্রায় দুই বছর আগে কোনো না কোনোভাবে শামিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একসময় শামিম তার কাছাকাছি আসতে শুরু করেন।
শামীম আহমেদ
পরবর্তীতে শামিম তার নানা সমস্যা দেখিয়ে টাকা নেন এবং খুবই অল্পদিনের মধ্যেই সেগুলো ফেরত দিয়ে দেবেন বলে জানান। কিন্তু সেটি তিনি করেননি।
আব্দুল মন্নান জানান, পাওনা টাকার জন্য শামিমের কফিল (স্পন্সর) এর কাছে অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতাদের কাছেও অভিযোগ করেন। এতে করেও যখন আব্দুল মন্নান সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পাচ্ছিলেন না; তখন তিনি কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করেন।
কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আব্দুল মন্নানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয়, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন।কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস তার মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং সেটি বাংলাদেশে প্রেরণ করেন।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়ন এর বিরাইমাবাদ গ্রামের শামীম আহমদ প্রায় তিন যুগ আগে কুয়েতে আসেন। প্রথমে সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন শামিম। পরে স্থানীয় এক নাগরিকের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে আকামা ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি প্রবাসীদের কাছ থেকে আকামা বাবদ টাকা নিলেও আকামা না লাগিয়ে প্রবাসীদের আকামাহীন করে দিচ্ছেন।ভিসা ব্যবসার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানাগেছে, অনেক প্রবাসীদের ভিসা দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা নিলেও পরে ভিসা দেননি, উল্টো সেসব প্রবাসীদের স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন শামীম।এদিকে এক পর্যায়ে শামীম রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। করোনার সময় বিল্ডিং মালিক পক্ষকে ভাড়া দেননি এই বলে যে, ভাড়াটেরা ভাড়া দেয়নি। কিন্তু মালিক পক্ষ সেটি মানতে নারাজ ছিল।
ফলে বিল্ডিং মালিক পক্ষ স্থানীয় আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শামীমের কফিলের উপর। ক্ষুব্ধ কফিল শামীমকে সময় বেধে দেন এ সমস্যা সমাধানের জন্য।
এরই প্রেক্ষিতে শামিম তার কফিলকে আশ্বস্ত করেন যে, দেশে তার প্রপার্টি বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসবেন।ফলে কফিল তাকে সুযোগ দেন দেশ থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য; প্রায় ৫ মাস পর শামিম কুয়েতে ফিরেন ঠিকই, কিন্তু টাকা নিয়ে যাননি।
এদিকে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানাগেছে, বিল্ডিং এর রেন্টাল মামলা থেকে শামীম পরিত্রাণ পেতে তার কফিলের ছেলের কাছ থেকে ১২ হাজার কুয়েতি দিনার “ব্যাংক এর চেক দিয়ে ঋণ হিসেবে নেন” ও সিলেট গোলাপগঞ্জ এর কুয়েত প্রবাসী হাজী আব্দুল মন্নান এর কাছ থেকেও “ব্যাংক এর চেক দিয়ে ঋণ নেন” ১২ হাজার কুয়েতি দিনার।
যদিও কথা ছিল দেশ থেকে টাকা নিয়ে এসে সেই টাকা পরিশোধ করবেন,কিন্তু দেশ থেকে ফিরে ২২ দিন কুয়েতে অতিবাহিত করলেও টাকা পরিশোধ করেননি শামিম। কুয়েত প্রবাসী আব্দুল মন্নান বলেন সবমিলিয়ে ৪১ হাজার কুয়েতি দিনার শামিম তার কাছ থেকে নিয়েছে।
এছাড়াও আকামার লাগানোর জন্য ২.৩.৫.৭ শত কুয়েতি দিনার শামিমকে দিয়েছেন এরকম অগণিত বাংলাদেশি সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা রয়েছেন; কিন্তু শামিম তাদের আকামা লাগাননি টাকাও ফেরত দেননি।
প্রায় ৭ মাস আগে শামিম কুয়েতে এসে ২২দিন ছিলেন। সেসময়েও অনেকের কাছ থেকে আকামা লাগানোর কথা বলে টাকা নিয়েছেন শামিম।