তারিখ: ২১ মে ২০২৫
১। শুরুতেই সেনাবাহিনী প্রধান (CAS) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল—দেশীয় ও আন্তর্জাতিক—সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগ তুলে বাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করছে। আমাদের তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু পুলিশ ও প্রশাসন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এবং সেনাবাহিনীই শেষ ভরসা, তাই এসব মহল ইচ্ছাকৃতভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়, যাতে তারা নিজেদের অসাংবিধানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।
২। সেনাপ্রধান বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি নানা মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এমনকি কখনও কখনও কর্মকর্তাদের হয়রানিও করা হচ্ছে, অথচ এসব বিষয়ে সেনা সদর দপ্তরকে যথাযথভাবে অবহিত করা হচ্ছে না। এ ধরণের বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে সেনা সদর দপ্তরের আওতাধীন এবং ভবিষ্যতে এসব বরদাস্ত করা হবে না।
৩। তিনি বলেন, বর্তমানে তিনি এমন এক অবস্থানে আছেন যেখানে তাঁর কোনও অভিভাবক (Ovivabok) নেই।
৪। সেনাপ্রধান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সাথে পরামর্শ না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, মানবিক করিডোর খোলা কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর অন্য কারো কাছে হস্তান্তরের মতো প্রস্তাব সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এসব সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সরকারই নিতে পারে।
৫। সেনাপ্রধান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রেখে। এমনকি জাতিসংঘে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর চিঠিও পাঠানো হয়েছে সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করেই। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারিতে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। দেশের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে একটি বৈধ, নির্বাচিত সরকার—কোনও অনির্বাচিত প্রশাসন নয়।
৬। একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যারাকে ফিরে যাই, কারণ আমরা এখন জনরোষ, ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে পারছি না এবং এতে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, আমরাও এই কথা ভেবেছি, কিন্তু এখনই সেনা প্রত্যাহার করলে সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
৭। একজন কমান্ডিং অফিসার (CO) জোর দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতীয় মর্যাদা কোনও অবস্থাতেই আপসযোগ্য নয়—এগুলো রক্ষার বিষয়টি অমার্জনীয়।
৮। এ পর্যায়ে এক কর্মকর্তা উঠে দাঁড়িয়ে সেনাপ্রধানকে বলেন, অফিসার কোর (Officer Corps) সেনাপ্রধানের পেছনে ঐক্যবদ্ধ এবং যেকোনো আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত।
৯। সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনী আর কোনো জনতার বিচার বা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ্য করবে না। তিনি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেন। তিনি CGS-কে নির্দেশ দেন যেন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় যাতে আর কোনো গণ-অপব্যবহার বা পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর হুমকি না দেওয়া হয়।
১০। সেনাপ্রধান বলেন, কিছু অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ও সৈনিক মিথ্যা দাবি করছেন যে তারা রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার। তিনি বলেন, যেসব শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তারা চাকরি হারিয়েছেন, সেইসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। আরও বলেন, কিছু অবসরপ্রাপ্ত স্বার্থান্বেষী অফিসার বর্তমানে কর্মরত অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন, যার উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীকে কলুষিত করা। এসব কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এমনকি কিছু রাজনৈতিক নেতা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের “ভারতের দালাল” আখ্যা দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সেনাবাহিনী একটি দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের স্বার্থেই দৃঢ়ভাবে অবস্থান করে।
১১। সেনাপ্রধান আরও বলেন, কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতি বা ভালো পদের জন্য নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ ধরণের আচরণকে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে দেখা হবে।
১২। শেষ মুহূর্তে সকল কর্মকর্তা একসাথে করতালি দিয়ে সেনাপ্রধানকে মনোবল ও নৈতিক সমর্থন জানান।।