রবিউল ইসলাম খাঁ, কুয়েত।
পবিত্র হজ্ব আজ
বুধবার মিনায় মুসল্লিদের জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে ।
পবিত্র হজ্জ আজ । লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিমাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক, ধ্বনিত মুখরিত আরাফাত ময়দান । সারা বিশ্বের প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম এবার হজে অংশ নিচ্ছেন ।
পবিত্র হজ্জের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বুধবার মিনায় মুসল্লিদের জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে । মিনায় পৌঁছে হাজিরা ফজর থেকে শুরু করে এশা অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন নিজ নিজ তাঁবুতে । মিনায় রাতে অবস্থান করে হাজিরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন । আজ বৃহস্পতিবার আরাফাত ময়দানে সমবেত হবেন হাজিরা ।
৯ জিলহজ্জ (সৌদি আরবের স্থানীয় সময়) আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয় । এই দ্বীনের নাম ইয়ামুল আরাফা । এই জন্য গতকাল রাতেই অনেককে মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ- পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানের দিকে রওনা হন । আরাফাতে যাওয়ার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মুসল্লীরা পায়ে হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে যে যেভাবে পারেন পৌঁছাবেন। এ আরাফাতের ময়দানেই মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ডঃ সালেহ বিন হুমাইদ । একই সাথে মসজিদে নামিরাতে নামাজ পড়াবেন তিনি। এবার হজের খুতবা বাংলাসহ ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে । খুতবা শোনার পর হাজিরা এখানে একই সাথে জোহর ও আসরের নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করবেন ।
আরাফাতের দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম । এই দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন, আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং গুনাহ থেকে পরিত্রাণের দিন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হাজীদের জন্য ফরজ । আরাফাতের ময়দানে হাজীরা হাজির হয়ে আল্লাহর রহমত তালাশ করেন । সমবেত সবাই ইবাদত – বন্দেগী ও গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর জিকির, দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। আর আল্লাহতালাও বান্দাদের ইবাদত বন্দেগী ও কান্নাকাটির বিনিময়ে তাদের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের ঘোষণা দেন ।
আরাফাত দিবসে দ্বীন পুর্নতার ঘোষণা : নবীজী ও সাহাবায়ে কেরাম যখন উকুফে আরাফা করেছিলেন তখনই আল্লাহ্ ও নবীজি (সা:) এর উপর কোরআনুল কারীমের সর্বশেষ আয়াত নাজিল করে আল্লতায়ালা বলেন , আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পুর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য চুড়ান্ত দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
আরাফা দিন সর্বোত্তম দিন:-
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা: সুত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন আরাফা দিবসের চেয়ে উত্তম কোন দিন নেই । এই দিনে আল্লাহতালা পৃথিবীবাসীকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার ওইসব বান্দাদেরকে দেখো , যারা বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো চুল নিয়ে অনেক দূর দূরান্ত থেকে আমার রহমতের আশায় ও শাস্তির হয়ে আমার কাছে এসেছে । এজন্য আরাফাত দিবসের চেয়ে বেশি দোযখ থেকে মুক্তির আর কোন দিন নেই । এই দিনে যে পরিমাণ দোজখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে অন কোন দিন করবে না ।
আরাফাত দিবস গুনাহ মাফের দিন :-
হযরত নাফে রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন , আমি রাসুলুল্লাহ সা: বলতে শুনেছি তিনি বলেন আল্লাহতালা আরাফার দিন স্বীয় বান্দার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন । যার অন্তরে বিন্দুমাত্র ইমান থাকবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেওয়া হবে ।
থাকবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেওয়া হবে ।
আরাফাত দিন জাহান্নামিদের মুক্তির দিন:- আরাফার দিন অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় । হযরত আয়েশা রাঃ সুত্রে বর্ণিত, নবীজি এরশাদ করেন, আরাফা দিবসে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য অন্য কোন দিন নেই । ইসলামের বিধান অনুসারে, আজ সূর্যাস্তের পর হাজিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাতের ময়দান থেকে রওনা দিবেন প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার দিকে । সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে আদায় করবেন এবং খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করবেন । তারপর মিনার জামা রায় শয়তানকে (প্রতীকী) নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন । এরপর ফজরের নামাজ শেষে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন হাজিরা । মিনায় প্রত্যাবর্ত্যের পর হাজীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয় । শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি, মাথা মুন্ডন করা , এবং তাওয়াফে জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন শয়তানকে তিনটি প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা । সবশেষে কাবা শরীফ বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা ।।