‘
নাসরিন আক্তার মৌসুমী‘💜
🌹১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত। দিনটা অন্যদিনের মতো না, সবখানে বিচ্ছেদের সুর। শুধু দূতাবাস নয়; কুয়েত প্রবাসী সকল বাংলাদেশীদের অন্তরে বিচ্ছেদের কষ্ট। কেনোনা, এটাই কুয়েত দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন এনডিসি,পিএসসি (অব.) এর দূতাবাসে শেষদিন। আড়াই বছরের সফল কূটনৈতিক দায়িত্বপালন শেষে প্রত্যাবর্তন করছেন বাংলাদেশে। কুয়েতে আসার পর থেকেই তিনি শুধু রাষ্ট্রদূত ছিলেন না, ছিলেন প্রবাসীদের অভিভাবক, শেষ আশ্রয়স্থল। শেষদিনেও তিনি স্থাপন করে গেলেন মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত।
🌹গল্পটা এক প্রবাসী নারীর। কুমিল্লার মেয়ে মোমেনা বেগম বিশ বছর পূর্বে দারিদ্র বিমোচনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন কুয়েতে। সবকিছুই ভালই চলছিলো। বিগত তিন বছর থেকে তাঁর আকামা নেই। আকামাবিহীন অবস্থায় কুয়েতে তাঁর দুঃখের অন্ত নেই। তাঁর দূরাবস্থা দেখে একজন প্রবাসী তাকে আশ্রয় দেন। তবুও তাঁর কোনো গতি হয় না। আকামা ছাড়া কোনো কাজও করতে পারছে না, দেশেও যেতে পারছে না।
🌹একদিন হঠাৎ করে ঐ মহিলার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। সব ঘটনা খুলে বলেন আমাকে। আমি তাকে নিয়ে যাই বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে যেদিন আমাদের রাষ্ট্রদূতের কুয়েতে শেষদিন। আল্লাহর কি অশেষ রহমত আমরা দূতাবাসে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই দূতাবাসে ঢুকলেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত। ঐ মহিলা সহ আমাকে উপরে তাঁর কেবিনে নিয়ে গেলেন। সব কথা শুনলেন এবং তাৎক্ষণিক ঐ মহিলার দেশে যাবার ব্যবস্থা করে দিলেন।
🌹মোমেনা বেগমের দেশে যাবার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু দেশে যাবার জন্য বিমানভাড়ার টাকা তাঁর কাছে নেই। ঐ সময়ে রাষ্ট্রদূতকে বিদায় জানানোর জন্য হাজী যুবায়ের নামক এক ভদ্রলোক সেখানে উপস্হিত হন। হাজী যুবায়ের সম্পর্কে আমার কোনো পূর্বধারণা না থাকলেও পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি উনি কুয়েতের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একজন। কুয়েতের বুকে সামাজিক কর্মকান্ডেও তার অনেক অবদান আছে।
🌹এই সুযোগে আমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোমেনা বেগমের সমস্যার কথা হাজী যুবায়েরকে জানান এবং টিকেটের ব্যবস্হা করে দিতে বলেন। তিনি একটু সময় নষ্ট না করে রাষ্ট্রদূতের কথায় রাজী হয়ে সেখানেই মোমেনার দেশে যাওয়ার টিকিটের টাকা (ক্যাশ) হস্তান্তর করেন। মোমেনার ভাগ্য খুবই ভালো বলতে হবে। ক’জনের কপালে এমন সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটে।
🌹এরকম হাজার হাজার প্রবাসী আছে, যাদের দুঃখ-কষ্টের সীমা নাই। তারপরও প্রবাসে পড়ে আছে। যদিও তারা কখনো দেশে ফেরত যেতে চায়,নানা সমস্যার কারনেও দেশে যেতে পারে না। এরসাথে আছে দূতাবাসের ভোগান্তি। এখান থেকে ওখানে, আজকে হবে না, কাল এসো, কাল না হলে পরশু। দূর-দূরান্ত থেকে আসা এই শ্রমিক গুলোর কাজ যদি মোমেনার মতো সহজ করে করা হতো তাহলে অনেক প্রবাসী ভাই-বোনেরা দেশে ফেরত যেতে পারতো।
🌹ব্যক্তিজীবনেও যে মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দিন একজন ভালো মানুষ তার প্রমান তিনি তার বিদায়ের শেষ লগ্নে দিয়ে গেলেন। হয়তোবা মোমেনাকে তাঁর মনে থাকবে না । কিন্তু মোমেনা যতদিন বেচে থাকবেন তার এই উপকারের কথা কোন দিন ভুলবেন না। কথায় বলে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। আসলেই কথাটা একেবারে সত্যি। আমাদের রাষ্ট্রদূত যেতে যেতে এই মুরব্বির দোয়া নিয়ে গেলেন। দুই হাত তার মাথায় বুলিয়ে দোয়া করলেন মন খুলে। তিনি যেখানেই থাকেন আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে এবং তার পরিবারকে ভালো রাখেন। আমরাও মোমেনার সাথে সাথে সেই দোয়াই করি আল্লাহ তায়ালা উনাকে এবং উনার পরিবারকে ভালো রাখেন, সুস্হ রাখেন এবং এভাবে সবসময় গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তওফিক দান করেন।।আমিন🌹🌹💜💜
রেডিও কুয়েত বাংলা সার্ভিসের পক্ষ থেকে আসহাব ভাইয়ের ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে তোলা ছবিটি আমার ভীষণ প্রিয় একটা ছবি,,